আওয়ামী লীগে একঝাঁক প্রার্থী বিএনপির ভিন্ন কৌশল

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আগামী নির্বাচন নিয়ে সরগরম বরগুনা-২ আসনের রাজনীতি। বামনা, পাথরঘাটা ও বেতাগী উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে ইতিমধ্যে প্রচারণা শুরু করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এ আসনে একাধিক প্রার্থী থাকায় বেকায়দায় আওয়ামী লীগ। অবশ্য নেতাকর্মীদের কথা- দল যাকে মনোনয়ন  দেবে তিনিই বিজয়ী হয়ে এ আসনটি উপহার দিতে পারবে দলকে। আসনটিতে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি, আওয়ামী লীগ ছাড়াও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সক্রিয়। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের  তেমন কোনো কার্যক্রম নেই।
বামনা উপজেলার চারটি ইউনিয়ন, পাথরঘাটা উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও  বেতাগী উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন এবং পাথরঘাটা ও বেতাগী পৌরসভা নিয়ে বরগুনা-২ আসন। এ আসন ছিল একসময় বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এটি দখলে নেয় আওয়ামী লীগ। এখন পর্যন্ত এ আসনের চালক আওয়ামী লীগের এমপিই। বিএনপি  নেতাকর্মীরা হাতছাড়া হওয়া আসনটি পুনরায় নিজেদের দখলে নেয়ার আশায় বুকবেঁধে মাঠে  নেমেছেন।
আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শওকত হাচানুর রহমান রিমন। কেন্দ্রীয় যুবলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হাওলাদার, প্রয়াত সংসদ সদস্য গোলাম সবুর টুলুর জ্যেষ্ঠ কন্যা ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফারজানা সবুর রুমকি, বরগুনা পৌরসভা থেকে দুবার নির্বাচিত মেয়র ও বরগুনা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহদাত  হোসেন, বামনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট  মো. হারুন অর রশীদ, বামনা উপজেলা  চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইতুল ইসলাম লিটু মৃধা।
২০১৩ সালের ২৬শে জুলাই মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় এ আসনের সংসদ সদস্য শিল্পপতি গোলাম সবুর টুলুর মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে টুলু পরিবারের কেউ অংশ  নেবেন- এমনটাই প্রত্যাশা ছিল তৃণমূল  নেতাকর্মীদের। কিন্তু তার পরিবারের কেউ প্রার্থী না হওয়ায় উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত হাচানুর রহমান রিমন। এরপর ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি দলের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
শওকত হাচানুর রহমান রিমন দলীয় নেতাকর্মীদের নানা কারণে বিরাগভাজন থাকলেও সাধারণ জনগণের আস্থাভাজন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন। তিনি একজন সৎ ও আদর্শবান মানুষ হিসেবে পরিচিত। গত ১০ বছরে বিস্ময়করভাবে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গড়েন রিমন। ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে  মেয়াদ শেষ না হতেই উপজেলা চেয়ারম্যান এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের মেয়াদ শেষ না হতেই উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন  পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।আগামী নির্বাচনেও তিনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন বরগুনা পৌরসভা থেকে দুবার নির্বাচিত  মেয়র শাহাদাত হোসেন। তার নিজ বাড়ি পাথরঘাটা উপজেলায় হওয়ায় পাথরঘাটা-বামনা-বেতাগী এলাকায় পোস্টারিং করে আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেন। তাছাড়া তিনি নিয়মিত গণসংযোগও করে আসছেন।
সম্প্রতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে দান অনুদান আর সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন যুদ্ধের তালিকায় নাম উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় যুবলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হাওলাদারের। নিজের এলাকায় সহস্রাধিক দুস্থ-দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীর শিক্ষা খরচ, শিক্ষিত যোগ্য বেকারদের চাকরি, বস্ত্রহীনদের বস্ত্র, রিকশাচালকদের রিকশা প্রদানসহ বিভিন্ন মন্দির, মসজিদ, বিদ্যালয় ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের উন্নয়নেও অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন তিনি।
যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ বিষয়ক সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হাওলাদার বলেন, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে দলীয় মনোনয়ন দিলে এ আসনের মানুষের ভালোবাসা ও সমর্থনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবো। নৌকার বিজয়ের ধারাকে অব্যাহত রাখতে সক্ষম হবো। সেই সঙ্গে অবহেলিত এই জনপদের ভাগ্য উন্নয়নে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে এক সঙ্গে কাজ করে যাবো।
বরগুনা পৌরসভার বর্তমান মেয়র ধনাঢ্য ব্যবসায়ী মো. শাহাদাত হোসেনও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে দল  থেকে যাকেই মনোনয়ন দেয়া হোক না কেন একজোট হয়ে সবাই তার পক্ষেই মাঠে নামবেন- এমনটাই ব্যক্ত করেছেন সবাই।
এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী, দলের ভাইস চেয়ারম্যান, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. নূরুল ইসলাম মনি, ওলামা দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক  ও লন্ডন শাখা বিএনপির সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা শামীম আহমেদ ও বেতাগী উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান কবীরের নাম আলোচনায় রয়েছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন মনোনয়ন পাবেন বলে মনে করছেন এ আসনের অধিকাংশ  নেতাকর্মী। খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু হয়, নিরপেক্ষ হয় এবং জনগণ যাতে ভোট দিতে পারে সে ধরনের একটি সহায়ক সরকারের অধীনে যদি নির্বাচন হয়, তবে সে নির্বাচনে আমরা জয়লাভ করবো।
এদিকে গত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি বরগুনা জেলা বিএনপির তৎকালীন সভাপতি মো. নূরুল ইসলাম মনি। তিনি ১৯৮৮, ১৯৯১ ও ২০০১ সালে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। পাশাপাশি আসনটিতে বিএনপির একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন। তবে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সংস্কারপন্থি নেতা হিসেবে আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম মনি কিছুটা বিতর্কে জড়িয়েছেন।
ওদিকে ওলামা দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক  মাওলানা শামীম আহমেদও ওই আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। দীর্ঘ ২৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে এলাকার তৃণমূল নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ  রেখেছেন সাবেক এই ছাত্রনেতা। বিগত আন্দোলনে এলাকার নির্যাতিত  নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন নিঃস্বার্থভাবে। এলাকার উন্নয়নে আরো সম্পৃক্ত থাকার জন্য আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে তিনি জানান।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর